ভুক্তভোগী বলেন, আয়িনের কাছে অভিযোগ করেও কোন বিচার পাওয়া যায়নি । প্রকাশ্য দিবালোকে একটি বাড়িতে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতি প্রমান করে দেশে আয়িনের শাসন বলে কিছু নেয়।
সর্বত্র হেলমেটবাহিনী আতঙ্ক
রাজনৈতিক অঙ্গনে মুখোশ ও হেলমেট বাহিনীর আতঙ্ক বিরাজ করছে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা বিএনপি ও সমমনা দলের সক্রিয় নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে মুখোশ বা হেলমেট পরা বাহিনী হামলা করছে। কারো কারো বাড়িতে হেলমেট পরা বাহিনী ককটেল নিক্ষেপ করে নিরাপদে পালিয়ে যাচ্ছে। আবার কোথাও বা নেতা-কর্মীদের না পেয়ে তাদের বাসায় ভাঙচুর ও লুটপাট করা হচ্ছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে এমন হামলায় মানবাধিকার কর্মীরা উদ্বিগ্ন। এরকম সন্ত্রাসী হামলা দেশকে চরম নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যাবে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তারা এই সব হামলার সুষ্ঠু তদন্ত্যের দাবি জানিয়েছেন।
বিএনপির অভিযোগ পুলিশের সহায়তায় সরকার দলীয় নেতা-কর্মীরা মুখোশ বা হেলমেট পরে নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা করছে। এ সব হামলাকারীরা পুলিশের সামনে দিয়ে নিরাপদে পালিয়ে যাচ্ছে। তবে পুলিশ তা অস্বীকার করে বলছে, হামলাকারী ওই সন্ত্রাসীরা মুখোশ বা হেলমেট যাই পরে ছদ্দবেশে থাকুক না কেন তাদেরকে খুঁজে বের করা হবে।
এর আগে ২০১৮ সালে রাজধানীতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে দমন করতে হেলমেট বাহিনী হামলা করে। শিক্ষার্থীদের সে আন্দোলনে জিগাতলা ধানমন্ডি এবং সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ছাত্রদের ওপর হামলা হয়। যারা হামলা করেন তারা পুলিশের সঙ্গেই ছিলেন। তাদের মাথায় ছিল হেলমেট এবং হাতে লাঠি, রড, জিআই পাইপ এবং রামদা ও চাপাতি। পুলিশের সামনেই হেলমেটধারীরা হামলা চালায়। তারা রীতিমতো সশস্ত্র অবস্থায় পুরো এলাকাজুড়ে মহড়া দেয়। হামলার পুরোটা সময় হামলাকারীরা পুলিশের সঙ্গে থাকলেও পুলিশ তাদের তখন গ্রেপ্তার বা আটক করেনি। এই হেলমেট বাহিনী কারা সে বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা অনেক কথা বললেও পুলিশ ছিল একেবারেই চুপ।
শিক্ষার্থীদের ওপর সেই ২০১৮ সালে হেলমেটবাহিনী বর্বর হামলা চালিয়ে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। এবার বিরোধী দলে সরকারবিরোধী আন্দোলনকেও দমন করতে পুলিশের ছত্রছায়ায় হেলমেটবাহিনী সারাদেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা করছে এমন অভিযোগ অনেকের।
এ বিষয়ে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনীতিতে যে অশুভ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে তা জাতির জন্য অশনি সঙ্কেত। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে যে ভাবে মুখোশধারী বা হেলমেটবাহিনী আক্রমণ করছে তা খুবই উদ্বেগজনক। এর আগে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল সেখানেও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর হেলমেটবাহিনী আক্রমণ করেছিল। এখনো বেছে বেছে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা হচ্ছে। এটা দেশকে চরম নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যাবে। এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে দ্রুত অপরাধীদের আইনের আওতায় না আনলে দেশকে অরাজক পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করা অসম্ভব হবে।
মুখোশ বা হেলমেট পরে হামলার এই প্রবণতা শুরু হয় গত অক্টোবরের থেকে। ঢাকায় গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর এই হামলার ঘটনা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। গত ১ মাসে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, সিলেট, যশোর, নোয়াখালী, ও লালমনিরহাটে বিএনপির অন্তত ৯৩ জন নেতা-কর্মীর বাড়িতে হামলা হয়েছে। বিরোধী দলের নেতাদের বাড়িতে হামলার পাশাপাশি গত দুই মাসে রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁয় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে অন্তত ১৮টি গুপ্ত হামলা হয়েছে। এতে নিহত হয়েছেন একজন। সেই সব ঘটনায় কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
চলতি মাসের শুরুতে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি আবু মোহাম্মদ মাসুমের বাড়িতে তিন দফা হামলার ঘটনা ঘটেছে। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার কাছাকাছি। ১ নভেম্বর সকালে তার বাড়িতে ‘ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা’ ইটপাটকেল ছোড়েন। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে তার পরিবার। এরপর রাতে রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের এক নেতার নেতৃত্বে অন্তত ৫০ জনের একটি দল মাসুমের বাড়িতে আবার হামলা চালায়। এই ঘটনার একটি ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, হামলাকারীরা মাসুমের বাড়ির ফটকে রামদা ও রড দিয়ে আঘাত করছেন। একপর্যায়ে ফটক ভেঙে তারা বাড়ির ভেতরে ঢুকে রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন এমনকি শৌচাগারের কমোডও ভাঙচুর করেন। হামলাকারীরা আলমারি ভেঙে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছে মাসুমের পরিবার। এই হামলার ঘটনার পর মাসুমের পরিবার রূপগঞ্জ ছেড়ে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। গত ১৪ নভেম্বর ভাড়া বাসায়ও ভাঙচুর চালানো হয়। ওইদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে একদল লোক মাসুমের ভাড়া বাসায় ঢুকে ভাঙচুর করে। বসুন্ধরার বাসায় হামলার ঘটনার তিন দিন পর কক্সবাজার থেকে মাসুমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাসুম এখন কারাগারে। এই কয়েক দফা হামলার ঘটনার পরও মাসুমের পরিবার পুলিশের কাছে যায়নি। বিএনপির কোনো নেতাও এ বিষয়ে অভিযোগ করেননি। তারা মনে করেন, পুলিশের কাছে গিয়ে কোনো লাভ হবে না বরং আরও হামলা বা মামলার শিকার হতে হবে।
Post a Comment