রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি যা করেছেন আর যা বললেন

সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ একটি বাংলা পত্রিকার সঙ্গে সুদীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তাঁর ১০ বছরের কর্মকাল নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মূল্যায়ন করা যায়। তাঁর সাফল্য এটুকু যে কোনো বিরোধে না জড়িয়ে তিনি ক্ষমতার প্রকৃত নিয়ন্ত্রকদের সুনজরে থাকতে সক্ষম হয়েছেন।

এটা করতে গিয়ে পরপর দুটি জাতীয় নির্বাচনে দেশের জনগণের ভোটাধিকার উপেক্ষিত হওয়া, রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক গুম-খুনের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনাগুলো সম্পর্কে তিনি একবারের জন্যও মুখ খোলেননি, এটাও বলতে হবে। বলতে হবে ছোটখাটো কারণে চিকিৎসা নিতে বেমানান সংখ্যায় সঙ্গী নিয়ে তাঁর বিদেশ সফরের কথাও। এর মাধ্যমে তিনি শুধু রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি নয়, বরং দেশের বিদ্যমান চিকিৎসাব্যবস্থার প্রতি আস্থায় চিড় ধরিয়ে দিয়েছেন।





অ্যান্ড্রয়েড ফোনে বিজয়ের বাধ্যবাধকতা কতটুকু যৌক্তিক?

সব অ্যান্ড্রয়েড মুঠোফোনে বিজয় কি–বোর্ড ব্যবহার করার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। বিজয় ‘এপিকে’ (কার্যত মোবাইল অ্যাপ) ছাড়া কোনো ধরনের স্মার্টফোন দেশে বাজারজাত করতে দেওয়া হবে না বলে নির্দেশনায় জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, বিটিআরসি যে মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংস্থা, সে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বিজয় বাংলা কি–বোর্ড ও সফটওয়্যারের আবিষ্কারক হিসেবে পরিচিত।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এই বাধ্যবাধতায় ব্যবহারকারীদের কী সুবিধা হবে সেই প্রশ্নের উত্তরে মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ‘ব্যবহারকারীর দিক থেকে সে প্রথমত বিনা মূল্যে একটি সফটওয়্যার পাচ্ছে, বাংলা লিখতে পারবে। এর বেশি আর কী সুবিধা এখান থেকে পাওয়ার আছে? আমরা বলেছি, উৎপাদনকারী বা আমদানিকারক যেন সফটওয়্যারটা দিয়ে দেয়, যাতে ব্যবহারকারীর হাতের কাছে একটা বাংলা লেখার সফটওয়্যার থাকে এবং সেটা সে বিনা মূল্যে পায়।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, তার কাছে বাংলা লেখার সফটওয়্যার বিনা মূল্যে দেওয়া, সরকার সেটাই করছে। কেউ যেন বলতে না পারেন যে আমি বাংলা লেখার কিছু পাইনি।’ (বিডিনিউজ ২৪, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৩)







রাশিয়াকে হটিয়ে তুরস্ক যেভাবে মধ্য এশিয়ায় একক প্রভাব গড়ছে

মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ ককেশাস দীর্ঘদিন ধরেই রাশিয়ার ভূরাজনৈতিক বলয়ে ছিল। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া যতই হোঁচট খাচ্ছে, তুরস্ক ততই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ওই অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।

এটা কোনো গোপন বিষয় নয় যে আজারবাইজান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানকে আঙ্কারা ‘তুর্কি বিশ্ব’ বলে মনে করে। তুরস্কের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল এটিকে একসময় ‘এক জাতি, ছয় রাষ্ট্র’ বলে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন। তাঁর উত্তরসূরি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান অবশ্য সাংস্কৃতিক বন্ধনকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে জ্বালানিকেই মূল কেন্দ্রে রেখেছেন।

তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে তুরস্কের মৈত্রী এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তুর্কি বলয়ের রাষ্ট্রগুলোর কোনো সংগঠনের সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও তুর্কমেনিস্তান আঙ্কারার মধ্য এশিয়া কৌশল বাস্তবায়নে মূল ভূমিকা পালন করবে। গত মাসেও এরদোয়ান বিষয়টিকে রাখঢাক না করেই বলেছিলেন, ‘আমি আশা করি, তুর্কমেনিস্তানের গ্যাস কাসপিয়ান সাগর হয়ে শিগগিরই তুরস্কে পৌঁছাবে।’

তুর্কমেনিস্তান বিশ্বের অন্যতম বিচ্ছিন্ন এলাকা হলেও প্রাকৃতিক গ্যাস মজুতের ক্ষেত্রে বিশ্বে চতুর্থ। রাশিয়া, ইরান ও কাতারের পরই দেশটির অবস্থান। চীন এখন তুর্কমেনিস্তানের গ্যাসের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। আঙ্কারার উদ্দেশ্য হলো সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত তুর্কমেনিস্তান থেকে জ্বালানি গ্যাস কিনে তুরস্ককে প্রাকৃতিক গ্যাসের আঞ্চলিক হাবে পরিণত করা।

সেটা কীভাবে হবে? রাশিয়া, আজারবাইজান, ইরান ও তুর্কমেনিস্তান থেকে বিপুল পরিমাণ গ্যাস আমদানি করে মজুত করবে তুরস্ক। সেই গ্যাস তারা ইউরোপে রপ্তানি করবে। নীতিগতভাবে তুরস্কের এই কৌশল সমর্থন দেবে ক্রেমলিন। কেননা নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া ইউরোপে আর খুব বেশি দিন গ্যাস সরবরাহ করতে পারবে না। এরপরও তুরস্কের জ্বালানিকৌশল রাশিয়ার বিরোধিতার মুখে পড়তে পারে।
উল্লেখ্য, সিনেটর আলেক্সান্দ্রা বাশকিন সম্প্রতি লিখেছেন, তুর্কমেনিস্তান থেকে আজারবাইন পর্যন্ত আন্তকাসপিয়ান পাইপলাইন নির্মাণ করতে সম্মতি দেবে না মস্কো।

ভবিষ্যতে সেটা আঙ্কারার সঙ্গে যুক্ত হবে কি না, সেই ভয় রয়েছে। বাশকিন তাঁর যুক্তিতে পরিবেশগত উদ্বেগের কথা বলেছেন, কিন্তু এর অন্তর্নিহিত ভূরাজনৈতিক উদ্বেগটাও পরিষ্কার। ক্রেমলিন যদি বাশকিনের এই চিন্তা ধারণও করে, তারপরও তুরস্ককে পাইপলাইন নির্মাণ করতে বাগড়া দিতে পারবে না। ইউক্রেন যুদ্ধে গাড্ডায় পড়ায় অন্য দেশকে, বিশেষ করে তুরস্ককে নির্দেশ দেওয়ার মতো ক্ষমতা এখন রাশিয়ার নেই।

ভিন্ন একটি পথ ভাবা যাক। ইউরোপে গ্যাস রপ্তানির জন্য তুর্কমেনিস্তান, কাজাখস্তান ও উজবেকিস্তানের ভেতর দিয়ে যাওয়া নিজেদের পাইপলাইন দিয়ে ইউরোপে গ্যাস রপ্তানির প্রস্তাব দিতে পারে মস্কো। কিন্তু বিশ্বে রাশিয়ার এখন যে একঘরে দশা এবং ভ্লাদিমির পুতিন যেভাবে তাঁর দেশকে একটি অচ্ছুত রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন, তাতে করে মধ্য এশিয়ার সাবেক সোভিয়েত দেশগুলো ব্যবসার ক্ষেত্রে ক্রেমলিনকে কোনো সাহায্য করবে বলে মনে হয় না।

যাহোক, মস্কো বদলা নেবে কি না, সেই ভয় উপেক্ষা করেই তুরস্ক তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে প্রাকৃতিক গ্যাসে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। ওই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর কাছ থেকে এরই মধ্যে বিপুল পরিমাণ গ্যাস আমদানি করছে তুরস্ক। আজারবাইজানের গ্যাসের প্রধান ক্রেতা আঙ্কারা। কিন্তু আজারবাইজানের মজুত গ্যাসের পরিমাণ সীমিত হওয়ায় তুর্কমেনিস্তানকেই নিজেদের ভূ-অর্থনৈতিক কৌশলের অপরিহার্য অংশ মনে করছে আঙ্কারা।



বিশ্ববাজারে নিম্নমুখী জ্বালানি তেলের দাম


আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সরবরাহ ব্যবস্থায় উদ্বেগ দূর হওয়ায় তেলের দাম এমন নিম্নমুখী। কারণ গ্রæপ অব সেভেন বা জি-৭ দেশগুলোর রাশিয়ান তেলের মূল্য নির্ধারণের জন্য প্রস্তাবিত রেঞ্জ বা সীমা বর্তমান বাণিজ্য স্তরের চেয়ে বেশি।
গতকাল বৃহস্পতিবার দেখা গেছে, ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৫০ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ কমে ৮৪ দশমিক ৯১ ডলারে দাঁড়িয়েছে। ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের দাম ব্যারেলপ্রতি ৪৬ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ কমে ৭৭ দশমিক ৪৮ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

রাশিয়ার তেলের ওপর মূল্যসীমা বর্তমান মাত্রার চেয়ে বেশি হতে যাচ্ছে এমন খবর প্রকাশের পর গত বুধবার দুই বেঞ্চমার্কের দামই ৩ শতাংশ কমে যায়। ইউরোপীয় একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জি-৭ রাশিয়ান সমুদ্রজাত তেলের মূল্য ব্যারেলপ্রতি ৬৫ থেকে ৭০ ডলারের মধ্য নির্ধারণ করতে চাচ্ছে। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সরকারগুলো এখনো দামের বিষয়ে একমত হয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার তেলের জন্য যে মূল্যসীমা বেঁধে দেওয়া হবে তা যদি বর্তমানের চেয়ে বেশি হয় তাহলে রাশিয়া তেল বিক্রি স্বাভাবিক রাখবে। এতে সরবরাহ সঙ্কটের ঝুঁকি কমে যাবে।
কমনওয়েলথ ব্যাংকের পণ্য বিশ্লেষক বিবেক ধর বলেছেন, মূল্যসীমাটি বাজারের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি হবে, যা বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করবে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কিছু ভারতীয় ও চীনা পরিশোধক ইউরাল ক্রুডের প্রস্তাবিত মূল্যসীমার নিচে দাম দিচ্ছে। রাশিয়ার ক্রুড অয়েল ইউরাল নামে পরিচিত।






বাধা পেয়ে সমাবেশে যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা আরও তীব্র
বরিশালে বিএনপির গণসমাবেশ আগামী শনিবার। এ গণসমাবেশকে ঘিরে এখন পুরো বিভাগের রাজনীতি সরগরম। বিএনপির লক্ষ্য বরিশালে সবচেয়ে বড় সমাবেশ করা। আর ক্ষমতাসীন দল মাঠে নেমেছে দলীয় নানা কর্মসূচি নিয়ে। হামলা, মহড়া এবং বাস, তিন চাকার যান, ভোলা-বরিশাল নৌপথের লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আবাসিক হোটেলে পুলিশের তল্লাশির ঘটনা ঘটছে। এ পরিস্থিতিতে গণসমাবেশের নানা বিষয় নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহানের সঙ্গে।



ইউক্রেনের মিকোলাইভ শহরে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া
https://aminul-24.blogspot.com

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মিকোলাইভে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এর ফলে শহরের কয়েকটি আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে।

কয়েক দিন ধরে ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত মিকোলাইভে দুই পক্ষের তুমুল লড়াই চলছে। এর জেরে ‘নিজেদের জীবন বাঁচাতে’ মিকোলাইভ শহরের ৬০ হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদ জায়গায় সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে রাশিয়া।

প্রত্যক্ষদর্শী আলেকজান্ডার মেজিনোভ রয়টার্সকে বলেন, রোববারের হামলার সময় তিনি তাঁর ঘরেই ছিলেন। হঠাৎ বিস্ফোরণে তিনি দ্রুত ভবন থেকে বের হয়ে আসতে যান। কিন্তু ফটক বন্ধ থাকায় বেরোতে পারছিলেন না। এর এক থেকে দুই মিনিটের মধ্যে আরেকটি বিস্ফোরণে ফটকটি উড়ে যায়। তিনি দ্রুত ভবন থেকে বের হয়ে আসেন। পরপর হামলায় ধ্বংস হয়ে যায় ওই আবাসিক ভবনের একাংশ।

ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রোববার একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় রাশিয়ার অন্তত ১২টি শাহেদ–১৩৬ ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। এসব ড্রোন ইরানের তৈরি।

এদিকে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু চলমান যুদ্ধের ক্রমাবনতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। এমনকি গত তিন দিনের মধ্যে দুবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন শোইগু।

এই বিষয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইউক্রেনে হামলা জোরদারে রাশিয়ার যেকোনো অজুহাত নাকচ করে দেওয়া হবে, এমন বার্তা শোইগুকে জানিয়ে দিয়েছেন অস্টিন।

পাশে কোনো বন্ধু নেই, যুদ্ধটা পুতিন একা করছেন

গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আবেগঘন ভাষায় জাতির উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছেন। ফ্যাসিবাদী দার্শনিক ইভান ইয়িনকে উদ্ধৃত করে পুতিন নিজেকে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াইয়ে একজন বীর হিসেবে চিত্রিত করেছেন। তাঁর এ বক্তব্য নতুন যুগ সৃষ্টির লড়াইয়ের কোনো প্রতীক নয়, বরং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট যে বাস্তবে একা হয়ে পড়েছেন, তারই প্রতিচ্ছবি।

পুতিন এ বক্তব্য দিয়েছেন ইউক্রেনে তাঁর পরিচালিত ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’-এর ‘সফলতা’ ঘোষণা করতে গিয়ে। পুতিনের কাছে সেই সাফল্য হলো দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন—ইউক্রেনের এই চার অঞ্চলকে রাশিয়ার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া। যদিও বাস্তবে এর একটি অঞ্চলেও রাশিয়ার সেনারা পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। যুদ্ধের ভয়াবহতা মোটেই হাস্যকর কোনো বিষয় নয়। কিন্তু পুতিন লড়াইয়ের বাস্তবতা সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ।

এর প্রমাণ মিলল তাঁর বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তব্যের মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। রাশিয়ার সেনাদের হটিয়ে দোনেৎস্কের লেম্যান শহরে পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন ইউক্রেনের সেনারা। রেলওয়ে জংশন, প্রতীকী তাৎপর্যসহ নানা কারণেই শহরটির কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে।

এ ঘটনার এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই রাশিয়ার মূল ভূমির সঙ্গে অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সংযোগকারী কার্চ সেতুতে বিস্ফোরণ ঘটে। তর্কাতীতভাবে সেতুটিকে ক্রেমলিন তাদের প্রোপাগান্ডার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। ক্রেমলিনপন্থী সংবাদমাধ্যমে কার্চ সেতুকে দুর্ভেদ্য হিসেবে চিত্রায়িত করে এসেছে।

দীর্ঘদিন ধরেই পুতিন তথাকথিত ‘শাসনভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা’ ও বিদেশের মাটিতে সেনা অভিযান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভণ্ডামিপূর্ণ অবস্থানের সমালোচনা করে আসছেন। ২০০৭ সালে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে পুতিন প্রথম এই সমালোচনা করেন। সর্বশেষ বক্তব্যে পুতিন দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য গুঁড়িয়ে দেওয়ার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে রাশিয়া। বাকি বিশ্ব এ লড়াইয়ে মস্কোর সঙ্গে রয়েছে। পুতিনের এ বক্তব্য চূড়ান্ত বাস্তবতাবিবর্জিত। যুক্তরাষ্ট্রের চাপে নতি স্বীকার করেনি, এমন কিছু দেশকে নিজের জোটসঙ্গী ভাবছেন পুতিন। কিন্তু বাস্তবতা হলো ক্রেমলিনের নেতৃত্বে জোট গড়তে তারা সম্ভবত ততটা আগ্রহী নয়।

ইরানের দৃষ্টান্তটা ধরা যাক। দেশটিতে এখন বড় ধরনের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। কট্টরপন্থী হলেও তেহরানের বর্তমান শাসকেরা পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্কের সেতু পুরোপুরি বন্ধ করে দেননি। প্রকৃতপক্ষে ইরানের নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য পশ্চিমের সঙ্গে দেনদরবার করছেন।




মতামত যে পাঁচ ভুলে ইউক্রেনে পুতিনের পরাজয় ঘটতে পারে

দুই দশক আগে যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক আক্রমণের মতো রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের ন্যায্যতা প্রদর্শন এটিই প্রমাণ করে যে, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্বশক্তিগুলো, সেইসঙ্গে অন্যরাও। প্রাচীন গ্রিক  ও রোমান সাম্রাজ্য থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক ইতিহাসের ফরাসি, জার্মান এবং ব্রিটিশ শক্তির আগ্রাসন থেকে দেখা যায়, ভূ-রাজনৈতিক অহংকার মারাত্মকভাবে রাজনৈতিক মূর্খতাকে ত্বরান্বিত করে।

ইউক্রেন যুদ্ধে পরিস্থিতি রাশিয়ার বিপক্ষে মোড় নিলে, দ্রুত বিজয় অর্জনে যে স্বপ্ন দেখেছিল ক্রেমলিন, তা অর্জনে ব্যর্থতার জন্য ভ্লাদিমির পুতিনের অহংকারী মনোভাবকেই দায়ী করা যেতে পারে। এর পেছনে আছে তাঁর পাঁচটি মারাত্মক ভুল।

প্রথম ভুল

একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের জন্য সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি নিয়ে অতিরিক্ত ধারণা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। সেই সঙ্গে রুশ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষাকে ভুলভাবে বিবেচনা করেছেন তিনি। সামরিকভাবে পিছিয়ে থাকা কিন্তু দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শত্রুর বিরুদ্ধে রাশিয়াকে এখন বাজেভাবে মূল্য দিতে হচ্ছে এবং সেইসঙ্গে সংঘর্ষে অপমানজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। ইউক্রেনীয়রা স্বেচ্ছায় যুদ্ধ করছে এবং দেশের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করছে। অন্যদিকে রুশ সৈন্যরা তাদের ইউনিট পরিত্যাগ করছে। নাগরিকদের যুদ্ধে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানোর পর রুশ পুরুষেরাও পালিয়ে যেতে শুরু করেছে।

দ্বিতীয় ভুল

পুতিনের অজ্ঞতাপূর্ণ দ্বিতীয় ধারণাটি হচ্ছে—তাঁর বিশ্বাস ছিল, হামলা চালানোর কয়েক দিনের মধ্যে কিয়েভ আত্মসমর্পণ করবে। অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদীর মতোই তিনিও একই ভুল করেছেন। দখলদারির বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ ইউক্রেনীয়দের প্রতিরোধ ও স্বাধীনতা রক্ষায় তাদের অঙ্গীকারকে ছোট করে দেখেছিলেন তিনি। অভিন্ন ইতিহাসের কারণে তিনি রাশিয়া ও ইউক্রেনের একটি অভিন্ন ভবিষ্যৎ ধরে নিয়েছিলেন। যদিও বেশির ভাগ ইউক্রেনীয়ই রুশ সাম্রাজ্যের অতীত থেকে বেরিয়ে আসার ইচ্ছাপোষণ করে। ইউক্রেনীয়দের এমন স্বাধীন পরিচয়ের আকাঙ্ক্ষার মধ্য দিয়ে পুতিনের যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে।  ইউক্রেনীয় দেশপ্রেম যেভাবে জেগে ওঠেছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি এবং সেখানে পুরোপুরি সহায়তা করেছে পশ্চিমা সমর্থন।

তৃতীয় ভুল

ন্যাটো ও পশ্চিমা শক্তি নিয়ে অনুমান সঠিক ছিল না পুতিনের। তাঁর হিসাবে ছিল, পশ্চিমা নিরাপত্তার বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির কারণে ন্যাটো এখন দুর্বল হয়ে গিয়েছে। তাই প্রাচ্যের কোনো ঘটনার ক্ষেত্রে ন্যাটোর প্রতিক্রিয়া কিছুটা ধীর হবে।

চতুর্থ ভুল

পুতিন এও ধারণা করেছিলেন, রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের প্রতি ইউরোপের নির্ভরশীলতার কারণে ইউক্রেন ইস্যুতে মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা তাদের পক্ষে কঠিন হবে। এখানেও তিনি ভুল প্রমাণিত হয়েছেন। সাহসী ও আক্রমণাত্মক রাশিয়ার প্রতি ইউরোপের প্রত্যাখ্যান ও যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ়তা আটলান্টিকের দুই প্রান্তকে আরও কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।

পঞ্চম ভুল

পুতিন ধরে নিয়েছিলেন, আফগানিস্তান ও ইরাকে ভুল, অর্থনীতি ও অভ্যন্তরীণ সমস্যা এবং চীনের উত্থানের কারণে আচ্ছন্ন থাকায় যুক্তরাষ্ট্র এখন পুরোপুরি পতনের দিকে রয়েছে। যার কারণে ইউক্রেন সংকটে ওয়াশিংটন তেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে না। এখানেও তিনি ভুল প্রমাণিত হয়েছেন। ২০০৮ সালে জর্জিয়ায় রাশিয়ার অনুপ্রবেশ, ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা এবং পশ্চিমা দেশগুলোর নির্বাচনগুলোতে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের ঘটনায় সেসময়ের মার্কিন প্রেসিডেন্টের মতো ইউক্রেন ইস্যুতে ভীরু প্রতিক্রিয়া দেখাননি বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযানকে মস্কোর বিরুদ্ধে পশ্চিমা শক্তিকে একত্রিত করার সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করেছেন এবং রাশিয়ার অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছেন।


সড়কপথে যে প্রতারণা এখন সংস্কৃতি


গত সেপ্টেম্বর মাসে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কাজে গিয়েছিলাম। বিকেল সোয়া চারটায় একটি বাসে রংপুরে ফেরার কথা ছিল। বেলা সাড়ে তিনটায় জানলাম বাসটি যাবে না। অগত্যা পাবনা থেকে নাটোরে এসে রাজশাহী থেকে রংপুরগামী বাসের অপেক্ষায় ছিলাম।

স্টপেজে এক ব্যক্তি জানালেন, ‘জেকে স্পেশাল’ নামের একটি বাস রাজশাহী থেকে রংপুর যাবে। দু-চার মিনিটের মধ্যে ওই নামের বাস চলে আসে। ওঠার জন্য এগিয়ে যেতেই জানলাম, এটা সে বাস নয়। অথচ ‘জেকে স্পেশাল’ নামে ওই বাসের গায়ে লেখা রাজশাহী-রংপুর। বাসটি চলে যাওয়ার পরপরই রাজশাহী থেকে অভিন্ন নামে আরেকটি বাস এল। ওই বাসে উঠলাম। আগের বাসটি সম্পর্কে সুপারভাইজার বললেন, ‘ওই বাসটি ভুয়া। যাবে বগুড়া।

কিন্তু যাত্রী নেবে রংপুরের। বগুড়ায় গিয়ে যাত্রী নামাবে। যাত্রীর ভোগান্তি হবে।’ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে জানালেন, কোনো উপায় নেই। মালিক নাকি খুব পাওয়ারফুল। এ রকম প্রতারণামূলক বাসগুলো সাধারণত মূল বাসগুলোর সর্বশেষ গন্তব্যের আগের দু–এক স্টপেজ পর্যন্ত যায়। প্রতারিত হন যাত্রীরা।

এ বাস্তবতা দেশের অসংখ্য সড়কে। ২৫ বছর আগের একবার রাজশাহী যাওয়ার কথা মনে পড়ল। রংপুরের মডার্ন মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সে সময় ‘আগমনী’ নামে একটি বাস রাজশাহী যেত। বাসটির যাত্রীসেবা ভালো। প্রায় একই রকম একটি বাস চলে আসে। আমি ওই বাসে উঠি।

বাসের গায়ে লেখা রাজশাহী, ডাকল রাজশাহী নামে, ভাড়াও নিল রাজশাহীর। কিন্তু লক্ষ করলাম, সার্ভিস অন্য যেকোনো দিনের চেয়ে খুবই খারাপ। বাস বগুড়া পর্যন্ত যাওয়ার পর বলল আর যাবে না। আমার সঙ্গে কিছুটা বাগ্‌বিতণ্ডা হয়েছিল। যখন বললাম ‘আগমনী বাসের এত অধঃপতন হয়েছে!’ তখন একজন বললেন, এটা তো ‘আগমনী’ নয়, ‘আগমন’। বাসের গায়ে তাকিয়ে দেখলাম, সত্যি তা–ই। এমনভাবে লেখা, বোঝা কঠিন এটি ‘আগমন’ নাকি ‘আগমনী’ বাস। তারপর থেকে বাসের নাম ভালো করে দেখে বাসে ওঠার চেষ্টা করি। একই বাসে একাধিক নামও ব্যবহার করা হয়। সামনে একটি, পাশে একটি ও পেছনে একটি।

সড়কে যেসব গাড়ির সেবার মান ভালো, মানুষেরও আস্থা আছে, সেসব কোম্পানির নাম ব্যবহার করে অনেকেই বাস চালাচ্ছেন। যে স্থানে বাস যাবে না, সেই স্থানের নাম গাড়িতে ব্যবহার করে। সরল বিশ্বাসে যাত্রীরা ওঠার পর বিপদে পড়েন। বাসে তুলে গন্তব্যে না গিয়ে মাঝপথে নামিয়ে দেওয়া হয়। যাত্রীদের কিছুই করার থাকে না।



ইউক্রেনকে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিচ্ছে জার্মানি

আগামী কয়েক দিনের মধ্যে প্রথম চালানে ইউক্রেনকে চারটি অত্যাধুনিক আইআরআইএসটি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহ করবে জার্মানি। ড্রোন হামলা ঠেকাতে এই আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দেওয়া হচ্ছে। গত শনিবার অঘোষিত সফরে ওদেসা পরিদর্শনের সময় জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টিনে লামব্রেশট এসব কথা জানান। খবর রয়টার্সের।

যখন ইউক্রেনের বন্দরনগরী ওদেসায় বিমান হামলার সাইরেন বাজছে, তখন আন্ডারগ্রাউন্ড বাংকারে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেকসি রেজনিকভের সঙ্গে আলাপ করছিলেন লামব্রেশট। পরে এই বৈঠকের জন্য পার্শ্ববর্তী মলদোভায় সফর দীর্ঘায়িত করেন তিনি।

এআরডি টেলিভিশনকে জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমরা অত্যাধুনিক আইআরআইএসটি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহ করব। বিশেষ করে ড্রোন হামলা থেকে সুরক্ষার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

ইউক্রেন সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইরানের তৈরি কামিকাজে (আত্মঘাতী) ড্রোনের ব্যাপক হামলার মুখে পড়েছে। এতে প্রাণহানির পাশাপাশি অবকাঠামোর মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।

ইউক্রেনকে আইআরআইএসটি ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহের বিষয়টি জার্মানি বিবেচনা করছে বলে মে মাসে জানা যায়। এর প্রতিটি ইউনিটের দাম ১৫ কোটি ইউরো।
বর্তমানে জার্মান সশস্ত্র বাহিনীর নিজেদের কাছেও এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেই। এই ব্যবস্থাকে বিশ্বের সর্বাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার একটি মনে করা হয়।


ইউক্রেন যুদ্ধের চিত্র পাল্টাচ্ছে পুতিনের সৈন্য সমাবেশের ঘোষণায় পশ্চিমাদের মাথায় হাত তিন সপ্তাহে ৭ হাজারের বেশি ইউক্রেনীয় সেনা নিহত :: কিয়েভের সাথে কোনো আলোচনায় যাবে না মস্কো :: জাপোরোজিয়ার ৩,৫০০ বাসিন্দার মিত্র

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন গতকাল জাতির উদ্দেশে একটি বিরল ভাষণে বলেছেন যে, ইউক্রেনে তার অভিযানের লক্ষ্য পরিবর্তন হয়নি। পদক্ষেপটি ‘প্রয়োজনীয় ও জরুরি’ এবং অবিলম্বে কার্যকর হয়েছে। তিনি ‘মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য’ নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশনার ফলে যারা কোন একসময় রুশ সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন বা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ভবিষ্যতে যে কোন প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর কাজে লাগবার জন্য, সেসব রিজার্ভিস্টদের এখন যুদ্ধ করার জন্য ডেকে পাঠানো হবে। পুতিন বলেছেন, মাতৃভূমি, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা আর জনগণের নিরাপত্তা রক্ষা করার তিনি সৈন্য সমাবেশের নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল থেকেই সৈন্য সমাবেশ শুরু হয়ে গিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, রাশিয়ার অনেক যুদ্ধাস্ত্র প্রস্তুত আছে। রাশিয়ার অস্ত্র উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্যও তিনি বাড়তি তহবিল বরাদ্দের নির্দেশ দিয়েছেন। পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি হুমকি দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতা যদি হুমকির মধ্যে পড়ে, রাশিয়া এবং এর জনগণকে রক্ষা করার জন্য আমরা সবরকমের ব্যবস্থা নেবো। এটা কোন ফাঁকা বুলি নয়। যারা পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আমাদের ব্ল্যাকমেইল করতে চায়, তাদের জানা উচিত যে, পাল্টা বাতাস তাদের দিকেও যেতে পারে।’

তিনি অভিযোগ করেন, পশ্চিমা দেশগুলো প্রমাণ করেছে যে, তারা চায় না রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি থাকুক। ডনবাসে যারা লড়াই করছে, তাদের আইনি স্বীকৃতি দেয়ারও তিনি ঘোষণা দিয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, পুতিন আরও বলেছেন, ইউক্রেনের যে এলাকাগুলো রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেখানকার বাসিন্দারা নিও-নাৎসি রাজত্বে যেতে চায় না। সেখানে যে গণভোটের আয়োজনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেই প্রসঙ্গে পুতিন বলেছেন, আমরা তাদের সহায়তায় রয়েছি।

এমন সময়ে পুতিন এ ভাষণটি দেন, যখন মস্কো পূর্ব এবং দক্ষিণে ইউক্রেনের ভূখণ্ডের উপর তার দখলকে সুসংহত করতে শুরু করেছে। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ায় যোগদানের জন্য ইউক্রেনের মুক্ত এলাকাগুলোতে গণভোট আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, গণভোটগুলো রাশিয়ার দ্বারা অঞ্চলগুলোকে সংযুক্ত করার বৈধতা দেবে। এর ফলে সেসব এলাকা, যার মধ্যে এমনকি ইউক্রেন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এলাকাও আছে, সেখানে যে কোন আক্রমণকে মস্কো নিজের উপর আক্রমণ বলে ঘোষণা করতে পারে। ফলে তারা নিজেদের রক্ষার কথা বলে এমনকি পারমাণবিক বোমা ব্যবহারেরও অজুহাত পাবে।

উপরন্তু, রাশিয়ার সংসদ মঙ্গলবার একটি আইন পাস করেছে যা রাশিয়ার ফৌজদারি কোডে ‘মোবিলাইজেশন’ এবং ‘মার্শাল ল’ এর ধারণাগুলি প্রবর্তন করেছে। এটি আরও জল্পনা জাগিয়েছে যে, পুতিন ইউক্রেনের অভিযানকে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ বলে ঘোষণা করতে পারেন। ফলে পুতিন ইউক্রেনে তার পূর্ণ সামরিক শক্তি প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। মঙ্গলবার, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ভি ল্যাভরভ বলেছেন, গণভোট অঞ্চলগুলিকে তাদের ভবিষ্যত নির্ধারণের অনুমতি দেবে। ‘বর্তমান পরিস্থিতি নিশ্চিত করে যে, তারা তাদের ভবিষ্যতের কর্তা হতে চায়,’ ল্যাভরভ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন নেটওয়ার্ক রসিয়া-১-কে বলেছেন।

চারটি অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থক কর্মকর্তারা - পূর্বে ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ক এবং দক্ষিণে খেরসন ও জাপোরোজিয়ায় চার দিন ধরে গণভোট নেয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন যা শুক্রবার থেকে শুরু হবে। এর মধ্যে লুহানস্ক এবং খেরসনের প্রায় পুরোটাই রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জাপোরোজিয়া এবং ডোনেৎস্কের বেশিরভাগ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, বাকি অংশে সংঘর্ষ চলছে। ২০১৪ সালে, রাশিয়ান বাহিনী ক্রিমিয়া আক্রমণ করেছিল এবং পুতিন একে রাশিয়ার সাথে সংযুক্ত করেছিলেন। সেখানেও তখন এই সংযুক্তিকরণের জন্য একইভাবে গণভোটের আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে ৯৭ শতাংশ ভোটার রাশিয়াকে সমর্থন করেছিলেন। বর্তমানে ক্রিমিয়া রাশিয়ার অংশ বলে স্বীকৃত।

পুতিনের সৈন্য সমাবেশের ঘোষণায় পশ্চিমাদের মাথায় হাত : পুতিনের এই ঘোষণার ফলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং ফ্রান্স জানিয়েছে, তারা গণভোটের ফলাফল কখনোই মেনে নেবে না। নেটো সামরিক জোট জানিয়েছে, এ ধরনের পরিকল্পনা যুদ্ধকে আরও উস্কে দেবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ইউক্রেনের মুক্ত অঞ্চলে অনুষ্ঠিত গণভোটের ফলাফলকে যুক্তরাষ্ট্র কখনোই স্বীকৃতি দিতে রাজি হবে না। ‘যদি এই গণভোট এগিয়ে যায়, এবং যদি রাশিয়া ইউক্রেনের ভূখণ্ড সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করে, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনই এটিকে স্বীকৃতি দেবে না,’ মার্কিন শীর্ষ কূটনীতিক ৭৭তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের পাশে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব জেমস ক্লিভারলির সাথে আলোচনার আগে বলেছিলেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা সতর্ক করেছে যে মস্কোর আক্রমণকে ন্যায্যতা দিতে গণভোটে কারচুপি করা হবে। ‘ইউক্রেনের কোনও কথিতভাবে সংযুক্ত অংশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনই রাশিয়ার দাবিকে স্বীকৃতি দেবে না’, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছেন। ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইউক্রেনের জন্য সমর্থন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন যাকে তিনি যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি বলে অভিহিত করেছেন। তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘গণভোটের কোনো বৈধতা নেই।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক জোসেপ বোরেল এক বিবৃতিতে বলেছেন যে, ব্লক এবং এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো গণভোটের ফলাফলকে স্বীকৃতি দেবে না এবং তারা অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা বিবেচনা করবে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ তার বক্তৃতায় বলেছেন, ‘রাশিয়াকে এখন বুঝতে হবে যে বোমা হামলা ও দখলকৃত অঞ্চলগুলোতে গণভোট হলেও তারা সামরিকভাবে তাদের ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে পারে না।’

তিন সপ্তাহে ৭ হাজারের বেশি ইউক্রেনীয় সেনা নিহত : গতকাল রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বোর্ড সভায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগু বলেছেন, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর নিকোলায়েভ এবং ক্রিভোই রোগের কাছে আক্রমণ করার সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। গত তিন সপ্তাহে একা কিয়েভ ৭ হাজারের বেশি সেনা এবং প্রায় ১ হাজার সামরিক সরঞ্জাম হারিয়েছে।

তিনি বলেন, রাশিয়ান সামরিক বাহিনী ডোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের অঞ্চল মুক্ত করে চলেছে এবং সুপ্রিম কমান্ডার-ইন-চীফ দ্বারা নির্ধারিত লক্ষ্যগুলি সম্পূর্ণরূপে অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত বিশেষ সামরিক অভিযান চালিয়ে যাবে। স্ট্রাইক ক্ষমতা জোরদার করতে ‘ইজিয়াম-বালাক্লেয়া গ্রুপকে ডনবাসে স্থানান্তর করা হয়েছে।’ তিনি জানান, রাশিয়ান সেনাবাহিনী ‘নিকোলায়েভ এবং ক্রিভোই রোগের কাছে আক্রমণ করার জন্য ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সমস্ত প্রচেষ্টাকে বিপর্যস্ত করেছে। শুধুমাত্র গত তিন সপ্তাহে, কিয়েভের ৭ হাজার সৈন্য নিহত এবং ৯৭০ টি সামরিক হার্ডওয়্যার ধ্বংস হয়েছে, যার মধ্যে ২০৮টি ট্যাঙ্ক এবং ২৪৫টি পদাতিক যুদ্ধের যান, ১৮৬টি সাঁজোয়া যান, ১৫টি বিমান এবং ৪টি হেলিকপ্টার রয়েছে।

কিয়েভের সাথে কোন আলোচনায় যাবে না মস্কো : ডনবাস রাশিয়ায় যোগদানের পর কিয়েভের সাথে মস্কোর আলোচনার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। রাশিয়ার স্টেট ডুমার (সংসদের নিম্নকক্ষ) পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান লিওনিড সøুটস্কি গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন। ‘দুর্ভাগ্যবশত, আলোচনা কিছুদিনের জন্য প্রশ্নের বাইরে ছিল। পশ্চিম এবং কিয়েভ জান্তা বলেছে যে, তারা আলোচনা করতে প্রস্তুত নয়। কিয়েভের রাজনীতিবিদরা আগে বলেছিলেন যে, আত্মসমর্পণই একমাত্র সম্ভাব্য উন্নয়ন,’ ডনবাসে রাশিয়ায় যোগদানের বিষয়ে গণভোটের পর আলোচনা সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম, কিন্তু কিয়েভ সমস্ত চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।’

তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, আলোচনার প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেছে, এখন আর ফিরে আসার সুযোগ নেই। ‘কারণটি হল যে পরিস্থিতিটি সামরিক উন্নয়ন এবং বেসামরিকদের মৃত্যুর দিকে পরিচালিত করেছে কিন্তু কিয়েভ সরকার এবং এর পিছনে যারা রয়েছে, তারা দুর্ভাগ্যবশত এটিকে পাত্তা দেয় না,’ সøুটস্কি যোগ করেছেন। জাপোরোজিয়ার ৩,৫০০ বাসিন্দা মিত্র বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন : জাপোরোজিয়া অঞ্চলের ৩,৫০০ জনেরও বেশি বাসিন্দা ইতিমধ্যেই রাশিয়ান সৈন্য বা ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের (ডিপিআর এবং এলপিআর) মিলিশিয়াদের সাথে যোগ দিয়েছেন বিশেষ সামরিক অভিযানে অংশ নিতে। ‘উই আর টুগেদার উইথ রাশিয়া’ আন্দোলনের নেতা ভøাদিমির রোগভ এ তথ্য জানিয়েছেন। মঙ্গলবার তিনি বার্তা সংস্থা তাসকে বলেন, ‘জাপোরোজেয়ের ৩,৫০০ জনেরও বেশি বাসিন্দা বিভিন্ন ফ্রন্টে লড়াই করছে - পিপলস রিপাবলিক (ডোনেটস্ক এবং লুহানস্কের) এবং জাপোরোজিয়া ও খেরসন অঞ্চলে, এই সংখ্যাটি ইউক্রেন থেকে মুক্ত হওয়া অন্য যে কোন এলাকার থেকে বেশি।’

নতুন কৌশল ঘোষণা কাদিরভের : রাশিয়ার উত্তর ককেশাস প্রজাতন্ত্রের চেচনিয়ার প্রধান রমজান কাদিরভ বলেছেন, রাশিয়ান যোদ্ধারা কিয়েভ সরকারের বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের অভিযানে নতুন কৌশল অবলম্বন করবে। ‘আমরা বিশেষ অভিযানে একটি নতুন কৌশল গ্রহণ করছি। আমি ইতিমধ্যে চেচেন প্রজাতন্ত্রের বিশেষ অভিযানের অপারেটিভ সদর দফতরের প্রধান ম্যাগোমেদ দাউদভের সাথে সমস্ত বিবরণ নিয়ে আলোচনা করেছি,’ কাদিরভ মঙ্গলবার তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে লিখেছেন। ‘প্রতিপক্ষ নতুন পরিকল্পনার সবচেয়ে গুরুতর পরিণতির মুখোমুখি হতে চলেছে,’ তিনি যোগ করেছেন। তার ভাষায়, নতুন কৌশল আগে ব্যবহৃত সব কৌশলকে ছাড়িয়ে গেছে।

খারকভ এবং লুহনস্কের সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করছে মিত্রবাহিনী : মিত্রবাহিনী খারকভ অঞ্চল এবং লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক (এলপিআর) এর মধ্যে সীমান্তে বসতি নিয়ন্ত্রণ করে, খারকভ অঞ্চলের সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের প্রধান ভিটালি গানচেভ গতকাল বলেছেন। ‘লুহানস্ক প্রজাতন্ত্রের সাথে সীমান্তের বসতিগুলি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি যে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সেখানে তাদের অবস্থান দাঁড়াবে,’ তিনি রসিয়া-২৪ টিভি চ্যানেলকে বলেছেন।

গানচেভ যোগ করেছেন যে, ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী লুহানস্ক এবং ডোনেৎস্ক গণপ্রজাতন্ত্রে রাশিয়ায় যোগদানের গণভোট আয়োজনে বাধা দেয়ার জন্য খারকভ অঞ্চল থেকে মিত্র বাহিনীকে তাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাবে। উল্লেখ্য, ডোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের কর্তৃপক্ষ, সেইসাথে জাপোরোজিয়া এবং খেরসন অঞ্চলের প্রশাসন, এর আগে রাশিয়াকে এর উপাদান সত্তা হিসাবে যোগদানের বিষয়ে গণভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আগামী ২৩-২৭ সেপ্টেম্বর গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সূত্র : তাস, নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি নিউজ, এপি।




মতামত পুতিনের ভুল ও এরদোয়ানের চতুরতা
রাশিয়ার প্রভাব যে হারে কমছে, সেই হারে কূটনৈতিকভাবে সেই জায়গা নিচ্ছে তুরস্ক। ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে কেউ যদি বিনা ঝুঁকিতে লাভবান হয়ে থাকে, সেটা হলো তুরস্ক
ছবি : রয়টার্স

ভ্লাদিমির পুতিন, ভলোদিমির জেলেনস্কি ও জো বাইডেন। তিনজনেরই ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে, কিন্তু তিন গতিতে। পুতিনের স্পেশাল মিলিটারি অপারেশনের গতিটা ছিল ধীর। এতই ধীর যে মিলিটারি অপারেশন আর ছয় মাসেও শেষ হওয়ার সুযোগ এল না; বরং সেটা এখন ন্যাটো বনাম রাশিয়ার ‘ফুল ভলিউম কনসার্ট’ হয়ে উঠেছে। জেলেনস্কি টিকে থাকছেন প্রতিদিনকার ভিত্তিতে। প্রতিদিন লড়তে পারা মানে আরও এক দিন সুযোগ পাওয়া। যদিও জানেন না কখন কোথায় রুশ মিসাইল এসে পড়বে, কখন রুশ আততায়ী তাঁকে নিশানা করবে। বাইডেনের ঘড়ির গতিও পুতিনের মতোই ধীর। শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোকে দিয়ে দীর্ঘ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছিল, ইউক্রেনকেও যুদ্ধের অনেক আগে থেকেই রাশিয়ার জন্য ফাঁদ হিসেবে তৈরি করা হচ্ছিল। পুতিনও সময় নিচ্ছিলেন। কিন্তু খারকিভ থেকে রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহার ও সেই এলাকায় ইউক্রেনের আপাত বিজয়ে মনে হচ্ছে, যুদ্ধ বরং দীর্ঘই হতে যাচ্ছে।  

অবশ্য পুতিন বলেছিলেন, তাঁর স্পেশাল মিলিটারি অপারেশন (এসএমও) দীর্ঘ হবে না। কিন্তু ইতিমধ্যে ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। তাহলে কি রাশিয়ার পরিকল্পনায় ভুল ছিল? না হলে দুই দফা পিছু হঠতে হলো কেন? এ বছরের মার্চ-এপ্রিলে কিয়েভের দোরগোড়ায় হানা দিয়েও ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিল রুশ বাহিনী। আর এই সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি উত্তর–পশ্চিম ইউক্রেনের খারকিভ থেকেও তড়িঘড়ি করে সৈন্য সরিয়ে নিতে হলো রাশিয়াকে। এ ঘটনায় পশ্চিমা গণমাধ্যমে রাশিয়ার সম্ভাব্য পরাজয়ের আলাপ জমে উঠেছে।

অথচ পুতিন এখনো চাঙা। মধ্যযুগীয় সিল্ক রুটের গঞ্জ-শহর সমরখন্দে মিলিত হয়েছিলেন রুশ, ভারত ও চীনের তিন নেতা। সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) নামের চীনা নেতৃত্বের এই আন্তর্জাতিক জোটে সংলাপ অংশীদার তুরস্ক, এবারই পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ পেল ইরান। এ সম্মেলনেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে যুদ্ধ দ্রুতই শেষ করার আশ্বাস দিয়েছেন। চীনা প্রেসিডেন্ট কোভিড সময়ের দুই বছর পর এই প্রথম বিদেশ সফর করলেন। পুতিন-সির মধ্যে বন্ধুত্ব কতটা, তা এই বাক্যেই বোঝা যায়। সি বলেছেন, ‘ইউক্রেনকে দিয়ে রাশিয়াকে ঘায়েল করার পশ্চিমা প্রচেষ্টা অত্যন্ত দুঃখজনক।’





ফের সংবাদে লখিমপুর খেরি, দুই দলিত কিশোরী খুন

যোগী-রাজ্য উত্তর প্রদেশের লখিমপুর খেরি জেলা আরও একবার সংবাদের শিরোনামে এল গতকাল বুধবার। ওই দিন সন্ধ্যায় ১৭ ও ১৫ বছরের দুই নাবালিকা সহোদরার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। সংবাদ সংস্থাকে রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে, ওই দুই কিশোরীকে ধর্ষণের পর শ্বাস রোধ করে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সেই অপরাধের অভিযোগে পুলিশ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
রাজ্য পুলিশের দাবি, ধৃত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন ওই কুকর্মের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তাঁদের নাম সুহেল, জুনায়েদ, হাফিজুল রহমান, করিমউদ্দিন ও আরিফ। জেলা পুলিশের দাবি, সুহেল ও জুনায়েদ দুই বোনকে একটি আখখেতে ধর্ষণ করেন। তাঁদের সেই কাজে সাহায্য করেন বাকিরা। প্রমাণ লোপেও তাঁরা সক্রিয় ছিলেন। ধৃত ষষ্ঠ ব্যক্তির নাম ছোটু। সে ওই দুই নাবালিকার প্রতিবেশী। অভিযুক্তদের সঙ্গে ওই দুই বোনের পরিচয় ছোটুই করিয়ে দিয়েছিল বলে পুলিশের দাবি। ময়নাতদন্তে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে বলে পুলিশ জানায়।
কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় লখিমপুর খেরিতে এক ঘটনায় চার কৃষকের মৃত্যু হয়েছিল। অভিযোগ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় কুমার মিশ্রর ছেলে আশিস গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে ফেলেন চার কৃষককে। সেই ঘটনার জেরে ক্ষুব্ধ কৃষকদের আক্রমণে নিহত হন অন্য চারজন। আশিস আজও জেলবন্দী। মামলার নিষ্পত্তি এখনো হয়নি। কৃষকেরা যেখানে নিহত হয়েছিলেন এর কাছাকাছি এলাকাতেই দুই কিশোরী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। মৃতদেহ দুটি কাছাকাছি এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশ জানায়।

জ্বালানিসংকটে ইউক্রেন নিয়ে বিভক্তি বাড়ছে ইউরোপে
এ মাসের শুরুর দিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁও বলেছেন, ‘ইউরোপের ঐক্য এখন প্রধানতম উদ্বেগ। আমাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করাই রাশিয়ার পরিচালিত ইউক্রেন যুদ্ধের প্রধান উদ্দেশ্য।’ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের বিদায়ের পর মাখোঁ নিজেকে ইউরোপের শীর্ষ নেতা বলে মনে করছেন। বারবার করে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সংহতি ও সমন্বয়ের তাগিদ দিচ্ছেন। আবার ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কও বজায় রাখার ওপরও জোর দিচ্ছেন। এ বছরের শুরুর দিকে ইউক্রেনে রাশিয়া আগ্রাসন শুরু করে। এ আগ্রাসন মোকাবিলা করতে গিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অসাধারণ ঐক্য দেখা দিয়েছিল। জ্বালানি তেলকে কেন্দ্র করে এখন সেই ঐক্যে ফাটল এমানুয়েল মাখোঁও বাল্টিক অঞ্চল ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর নেতাদের ‘যুদ্ধ প্ররোচনাকারী’ হিসেবে চিত্রিত করে তাঁদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করছেন। আবার তিনি বলছেন, ‘আমাদের পূর্বাঞ্চলের দেশগুলোর’ রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘একা পদক্ষেপ’ নেওয়া ঠিক হবে না। এদিকে জনতুষ্টিবাদী দলগুলো ইউরোপের রাজনীতিতে শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলছে। এ মাসের শেষে ইতালিতে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে অতি ডানপন্থীদের জোট। ব্রাদার্স অব ইতালি দলের জর্জা মেলোনির নেতৃত্বে এ জোটে প্রধান দুই সহযোগী হলো নর্দার্ন লিগের মাতেও সালভানি ও ফোরজা ইতালির সিলভিও বার্লুসকোনি।
মূলধারার ভোটারদের মন জয় করতে মেলোনি ইউক্রেন সংকটকে প্রথাগতভাবেই ব্যবহার করেছেন। কিন্তু তাঁর প্রধান জোটসঙ্গী এবং ইউরোপের জনতুষ্টিবাদী দলগুলো জ্বালানিসংকটের প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার ওপর কেন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো, সেই প্রশ্ন তুলছে।
দেখা দিতে শুরু করেছে।



চার্লসকে রাষ্ট্রপ্রধান ঘোষণা করলো অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ড

রাজা তৃতীয় চার্লসকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ড।

রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) দেশ দুটির রাজধানীতে পৃথক অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নিউ জিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে পার্লামেন্টে থেকে চার্লসকে রাজা হিসেবে ঘোষণার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডার্ন রাজা তৃতীয় চার্লসকে তাদের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন।

অস্ট্রেলিয়ায় ক্যানবেরাতে পার্লামেন্ট হাউজে চার্লসকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ঘোষণার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অস্ট্রেলিয়ায় ব্রিটিশ রাজত্বের প্রতিনিধি গভর্নর জেনারেল ডেভিড হার্লি চার্লসকে তাদের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন।

ব্রিটিশ রাজা ইংল্যান্ড ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডসহ ১৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান।

এর আগে শনিবার যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় সকালে লন্ডনের সেন্ট জেমসেস প্রাসাদে অ্যাকসেশন কাউন্সিলের সামনে প্রিন্স চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জকে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।




আধুনিক গণতন্ত্রে একজন রানি হয়ে উঠেছিলেন তিনি

‘সব ঘড়ি বন্ধ করে দাও, সব টেলিফোনের তার কেটে দাও,’ ডব্লিউ এইচ অডেনের ‘ফিউনারেল ব্লুজ’ কবিতার শুরুর লাইনটা এ মুহূর্তের জন্য প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে। আপনার পছন্দ হোক আর না হোক, তাঁর চলে যাওয়ার দিনটি শোকের। সেই শোকের কালো দিনটিতে জনজীবনের বেশির ভাগ অংশই থেমে যাবে; অনুষ্ঠান সম্প্রচারকারীরা তাদের সময়সূচি স্থগিত করে তাঁর রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিয়ে ব্যস্ত হবে।

ব্রিটিশ ইতিহাসে দীর্ঘতম রাজত্ব করা রানির মৃত্যু নিশ্চিতভাবেই জাতির জীবনে একটি উল্লেখযোগ্য এবং অস্থির মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। বিশেষ করে একটি অর্থনৈতিক সংকট মাথাচাড়া দেওয়ার মুহূর্তে যখন একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নিলেন, সেই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার মধ্যে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের চলে যাওয়ার ঘটনা আরও গুরুত্ব বহন করছে।

৭০ বছর ধরে কোটি কোটি মানুষের জীবনের পটভূমিতে তিনি একটি ধ্রুবক, অবিচলিত উপস্থিতি, দুঃসময়ে আশ্বস্ত করা কণ্ঠস্বর হয়ে ছিলেন।


সিলেটে যানজটের জন্য দায়ী অপরিকল্পিত নগরব্যবস্থা
সিলেট নগরে সাম্প্রতিক সময়ে যানজট বেড়েছে। এ কারণে নগরবাসীকে দিনরাত যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ মানুষকে আটকে থাকতে হচ্ছে। এ নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে সিলেট মহানগরের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সাল মাহমুদের সঙ্গে।
সিলেট নগরে সম্প্রতি যানজট বেড়েছে। কারণগুলো বলবেন?
ফয়সাল মাহমুদ: বর্তমান সময়ে কিছু কিছু স্থানে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে সিটি করপোরেশনের ড্রেনেজ কাজ চলমান থাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।
সিলেট নগরে যানজটের জন্য কোন বিষয়গুলো দায়ী?
য়সাল মাহমুদ: সিলেটে যানজটের জন্য মূলত দায়ী অপরিকল্পিত নগরব্যবস্থা। নগরের যানবাহনের সংখ্যার তুলনায় রাস্তা অপ্রতুল। শহরের কিছু স্থানের রাস্তা সংকীর্ণ। এ ছাড়া দুই দফা বন্যার কারণে অনেক জায়গায় রাস্তা ভেঙে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে অনেক সময় বিভিন্ন যানবাহন গর্তে পড়ে বিকল হয়ে পড়ছে। ট্রাফিক পুলিশ তাৎক্ষণিক এসব যানকে রাস্তার পাশে সরিয়ে রাস্তা সচল রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ ছাড়া জনগণের মধ্যে ট্রাফিক–সচেতনতার অভাব থাকায় অনেক সময় যানজটের সৃষ্টি হয়।
সিলেট নগরের অনেক বিপণিবিতান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। এ কারণে অনেকে রাস্তায় যানবাহন পার্ক করছেন। ট্রাফিক পুলিশ এ ক্ষেত্রে কী ভূমিকা রাখছে?

ফয়সাল মাহমুদ: সিলেট শহরের অধিকাংশ বিপণিবিতান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। এ কারণে বিপণিবিতানে আসা লোকজন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ব্যক্তিগত যানবাহনগুলো রাস্তায় পার্ক করে রাখা হয়। ট্রাফিক বিভাগ এ ক্ষেত্রে অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে।

পাশাপাশি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ট্রাফিক আইন নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বৃহস্পতিবার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ট্রাফিক এডুকেশন নেটওয়ার্ক কার্যক্রম চলমান। এ ছাড়া কেউ যেন রাস্তায় যানবাহন পার্ক না করেন, সেটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা আছে। একইভাবে বিপণিবিতানের সামনে যেন পার্ক না করা হয়, সেটা বিপণিবিতানগুলোর মালিক সমিতিকেও বলা আছে।




নির্বাচনব্যবস্থা সুষ্ঠু ভোটে ইভিএমের নয়টি চ্যালেঞ্জ ২০০৭ সাল থেকে দেড় দশকে অন্তত পাঁচ হাজার কোটি টাকা খরচের পর নির্বাচন কমিশন ইভিএমে ৬ থেকে ৭৫টি আসনে ভোটের সক্ষমতা অর্জন করেছে। সেখানে মাত্র এক বছরে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোটের ‘সব সঠিকতা’ কতটা নিশ্চিত করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।


ইভিএমের মাধ্যমে ভোট দিচ্ছেন এক নারী। ঢাকার ধামরাইয়ের সূতিপাড়া ইউনিয়নের বাথুলী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে 
ফাইল ছবি

গত ৩০ মে নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান বলেছেন, ‘গোপন কক্ষে একজন করে “ডাকাত” দাঁড়িয়ে থাকে, এটাই ইভিএমের চ্যালেঞ্জ।’ (প্রথম আলো, ৩০ মে ২০২২) এমতাবস্থায় ভোটার শনাক্তকরণের পর যেখানে ডাকাতেরা ‘বাটন’টি টিপে দেন, সেখানে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কারিগরি উৎকর্ষের ইভিএমও স্বচ্ছ নির্বাচনের নিশ্চয়তা দেয় না।

বাংলাদেশের ভোটারদের অবিশ্বাস জেগেছে যে মূলত ক্ষমতাসীন দলই নির্বাচন পরিচালনা করে, নির্বাচন কমিশন তাদের আজ্ঞাবহ! ইভিএমের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন এবং ভোটব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা আছে কি না, সেটা।

বিষয়টি শুধুই কারিগরি নয়, বরং রাজনৈতিকও। তবে রাজনৈতিক ক্ষমতাচর্চার বিষয়গুলো এক পাশে সরিয়ে রেখে এখানে কারিগরি দিক থেকে ইভিএমের ৯টি চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে হলো


সাজানো নির্বাচন করতে পায়তারা চালাচ্ছে ইসি

নির্বাচন কমিশন সাজানো নির্বাচন করতে পায়তারা চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। তিনি বলেন, সংলাপে প্রায় সকল রাজনৈতিক দলগুলো ইভিএম-এর বিরোধীতা করেছে কিন্তু নির্বাচন কমিশন ইভিএম-এ ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের বেশির ভাগ মানুষ মনে করে, ইভিএম হচ্ছে কারচুপির মেশিন। আবার নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি বলছে, সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব নয়। তাই নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে তাতে অনেকেরই সন্দেহ আছে। গতকাল বুধবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

জিএম কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশন কোন অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে মাতামাতি করছে। অপরদিকে, দেশের মানুষ কথা বলতে পারছে না। কোন দাবীতে আন্দোলন হলে পুলিশ ও প্রতিপক্ষরা তাতে হামলা চালাচ্ছে। তাতে মনে হচ্ছে, এমন বাস্তবতায় নির্বাচন হলে লেভেল প্লেইং ফিল্ড হবে না। যেখানে সরকারের ৯০ ভাগ প্রভাব রয়েছে, পুলিশ ও প্রশাসন সকারের হাতে, এমন বাস্তবতায় সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না।
সাংবাদিকদের অপর এর প্রশ্নের জবাবে গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, বেগম রওশন এরশাদ বারবার বলেছেন, আমি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হতে চাই না। প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আমাদের তিনি পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা বা না করা জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের এখতিয়ার।
তিনি বলেন, অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে বাইরের কিছু মানুষ হয়তো, বেগম রওশন এরশাদের নাম ব্যবহার করে ভিন্ন অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। যারা জাতীয় পার্টির কেউ না, কেউ হয়তো ছিলো অনেক আগে জাতীয় পার্টিতে আবার সুর্নিদিষ্ট অভিযোগে কাউকে কাউকে পার্টি থেকে বহিস্কার করা হয়েছে, তারা বেগম রওশন এরশাদকে অপব্যাবহার করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আবার অসুস্থতার কারণে দীর্ঘ প্রায় এক বছর বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে তিনি অবদান রাখতে পারছেন না। তাই পার্টির সংসদীয় দল জাতীয় পার্টির ঐক্য রক্ষা ও পার্টিকে ষড়যন্ত্রের হাত থেকে বাঁচাতে বেগম রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা না রাখার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গেলো এক বছরে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল অসুস্থ বিরোধীদলীয় নেতার কর্মকান্ড নিয়ে ভাবেনি। এখন জাতীয় পার্টির স্বার্থেই বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নির্বাচনী জোট গঠনের বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের পূর্ব মুহুর্তে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে জোট গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তখনকার বাস্তবতা ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার কথা বিবেচনা করে জোট গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জাতীয় পার্টি। তবে, এখন আমরা তিনশো আসনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।






যে কারণে রাশিয়ার অস্ত্রে জং ধরেছে

ইউক্রেন যুদ্ধ রাশিয়ার অস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জামের অনেক দুর্বলতা প্রকাশ করে দিয়েছে। রুশ ট্যাংকের বিস্ময়কর ক্ষয়ক্ষতি, তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র ইউক্রেনীয় প্রতিপক্ষের ওপর বিমানের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠায় রাশিয়ান বিমানবাহিনীর ব্যর্থতা এবং রাশিয়ান ব্ল্যাক সি ফ্লিটের প্রধান রণতরি মস্কভা ফ্ল্যাগশিপের ডুবে যাওয়া রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর অনেক সামরিক ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরছে।

যদিও কিছু বিপর্যয়ের জন্য দুর্বল কমান্ড এবং সেনা প্রেরণার অভাবসহ দুর্বল প্রশিক্ষণকে দায়ী করা যেতে পারে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সরঞ্জামগুলোর সক্ষমতা পরিমাপ করা হয়নি। কেন? এর উত্তর খুঁজতে ইতিহাসের দিকে ফিরতে হবে।

সোভিয়েত আমলে আমেরিকান এবং অন্যান্য পশ্চিমা অস্ত্রশস্ত্র মোকাবিলায় রাশিয়া শক্তপোক্তভাবে সামরিক সরঞ্জাম তৈরি করেছিল। এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশিয়া ইয়াক-৩, লাভোচকিন এলএ-৭ এবং ইলিউশিন-২ স্টর্মোভিকের মতো যুদ্ধবিমান বানিয়েছিল। রাশিয়ান অস্ত্র সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে সফল ট্যাংক টি-৩৪। এটি ঢালু বর্মসহ প্রথম আধুনিক যুদ্ধ ট্যাংক।

টি-৩৪ ট্যাংকে একটি ইনডিপেনডেন্ট সাসপেনশন সিস্টেম রয়েছে, মূলত যার ডিজাইন করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের জন ওয়াল্টার ক্রিস্টি। এ ছাড়া রাশিয়া কার্যকরভাবে যুদ্ধজাহাজ, পারমাণবিক সাবমেরিন, ফাইটার বিমান এবং বোমারু বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং ভারী আইসিবিএমসহ সব ধরনের রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে।





আফগানিস্তানে ফের ভূমিকম্প, নিহত অন্তত ৮

আফগানিস্তানের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ নানগারহারের রাজধানী জালালাবাদ ও কুনার প্রদেশে ভূমিকম্পে অন্তত আট জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও নয় জন। হতাহতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানিয়েছেন তালেবান কর্মকর্তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতত্ত্ব গবেষণা সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভের (ইউএসজিএস) এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রোববার মধ্যরাতের পর ঘটে এই ভূমিকম্প এবং এটির মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৩।
আফগানিস্তানের বার্তাসংস্থা বাখতার নিউজ এজেন্সিকে কুনার প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র মৌলভি নাজিউল্লাহ হানিফ বলেন, ‘রোববার মধ্যরাতের ভূমিকম্পে নানগারহার ও কুনার— দুই প্রদেশেই প্রাণহানি ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
‘হতাহতের যে সংখ্যা জানা গেছে, সেটি প্রাথমিক। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’
দেশটির দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম হাক্কানি জানান, প্রাথমিক প্রতিবেদনগুলোতে ৬ জনের মৃত্যু ও ৯ জন আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছিল।
জুনে আফগানিস্তানে শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে ১০০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ও বহু গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। দেশটি এখনও সেই ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। সূত্র : রয়টার্স

Post a Comment

Previous Post Next Post