ভারতে কুস্তিগিরদের যৌন হয়রানির হেস্তনেস্ত করতে বিজেপির ওপর চাপ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। চাপ বাড়িয়েছেন বিজেপির নেতারাও। এবার জানাজানি হয়েছে, এক নারী কুস্তিগির যৌন হেনস্তার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেই দুই বছর আগে জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী প্রতিকারের আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিজ ভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে কিছুই করা হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের পর গত ২৮ এপ্রিল দিল্লি পুলিশ ব্রিজ ভূষণের বিরুদ্ধে যে দুটি এফআইআর দাখিল করে, তাতে এই বিষয়টি জানা গেছে। এফআইআরে এক নারী কুস্তিগির লিখেছেন, দুই বছর আগে এক অনুষ্ঠানে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন, ব্রিজ ভূষণের হাতে তাঁরা শারীরিক ও মানসিকভাবে নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন। তা শুনে প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, ক্রীড়া মন্ত্রণালয় দ্রুত প্রতিকার করবে। মন্ত্রণালয় থেকে তাঁদের ফোন করা হবে। কিন্তু কিছুই হয়নি।
ইউক্রেনজুড়ে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। গত তিন দিনের মধ্যে এ ধরনের দ্বিতীয় হামলা এটি। তবে রুশ বাহিনীর ছোড়া ১৮টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের ১৫টিই ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইউক্রেন।
আজ সোমবার দিনের শুরুতে এ হামলা চালানো হয়। এমন সময় এ হামলার ঘটনা ঘটল, যখন পাল্টা হামলার প্রস্তুতি গুছিয়ে আনার কথা জানিয়েছে কিয়েভ।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন, হামলায় দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় একটি শহরের রেল যোগাযোগকেন্দ্রে আগুন ধরে যায়। এতে ৩৪ জন আহত হন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি।
সাত বছর পর প্রথম ৬ এপ্রিল সৌদি আরব ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসলেন। এর এক মাস আগে দুই দেশের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বৈঠকে বসে বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দেন। দীর্ঘদিনের শত্রুতা ভুলে তাঁরা দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন।
মজার বিষয়, দুই দেশের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বৈঠক মধ্যপ্রাচ্যে হয়নি। চীনের মধ্যস্থতায় তাঁরা বেইজিংয়ে বৈঠকে বসেছেন। এর আগে ওমান ও ইরাক দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশীকে বৈঠকে বসাতে কয়েক বছর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।
পশ্চিমা বিশ্বে এখন চীনের প্রধান ভূমিকা, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়ার অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখা। এমনকি ব্যাপক সমালোচনা সত্ত্বেও রাশিয়ায় ইউক্রেনের হামলা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলতেও রাজি নয় চীন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত কিছুর পরও মধ্যপ্রাচ্যে শান্তিপ্রতিষ্ঠায় চীনের এই মুখ্য ভূমিকা তাদের জন্য বিরাট এক সাফল্য। অথচ ঐতিহাসিকভাবে চীন বৈশ্বিক সংঘাতে কখনো নিজেদের জড়াতে চায় না।
দেখেশুনে মনে হচ্ছে, এটি চীনের অনেক বড় স্বপ্ন। ইরান–সৌদি বৈঠকের আগে গত ফেব্রুয়ারিতে ‘সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সব মতপার্থক্য ও বিরোধের সমাধান’ শীর্ষক বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগ ঘোষণা করেছিল বেইজিং।
গত সপ্তাহে আবার চীনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং ঘোষণা দিলেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতা করতে বেইজিং প্রস্তুত।
জার্মানির আর্নল্ড–বার্গস্টেইসার–ইনস্টিটিউট ফ্রিবার্গের অ্যাসোসিয়েট ফেলো জুলিয়া গুরল–হলার বলেন, ‘সৌদি–ইরান চুক্তি চীনের “ভবিষ্যৎ উদ্যোগের মঞ্চ” হয়ে উঠতে পারে। তারা ঘোষণা দিয়েছে, অতীতের তুলনায় এখন তারা যেকোনো সংঘাতে বৃহত্তর ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীনের এসব ঘোষণা এমন সময়ে এল, যখন মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ক্ষয়িষ্ণু।
ঐতিহ্যগতভাবে এ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখা দেয়। এ ছাড়া ইরাক ও আফগানিস্তানে তাদের দীর্ঘ দখলদারত্ব এবং দুই দেশ থেকে হঠাৎ সেনা প্রত্যাহার তাদের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বৈশ্বিক পুলিশম্যান’–এর ভূমিকা নিয়ে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ব্যর্থতা সত্ত্বেও দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যে ভূমিকা রেখেছে, চীন কি সেটা পারবে?
‘সৌদি-ইরান চুক্তি চীনের ‘ভবিষ্যৎ উদ্যোগের মঞ্চ’ হয়ে উঠতে পারে। তারা ঘোষণা দিয়েছে, অতীতের তুলনায় এখন তারা যেকোনো সংঘাতে বৃহত্তর ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর হচ্ছে ‘না’। বিশ্বব্যাপী চীনের প্রভাব দ্রুত বাড়লেও মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার মতো সক্ষমতা তাদের নেই। এ অঞ্চলে ওয়াশিংটনের হাজার হাজার সেনা ও সামরিক ঘাঁটি রয়েছে এবং মিত্রদের রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু বেইজিং এই দায়দায়িত্ব না–ও নিতে পারে। এ মুহূর্তে চীন কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব সম্প্রসারণ করতে পারে। নিরাপত্তা ইস্যুতে আগের মতোই নেতৃত্বের আসনে থাকতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
সৌদি আরব ও ইরানের শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদার চীন এবং এ দুই দেশের তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতাও তারা। ২০২১ সালে ইরানের সঙ্গে ২৫ বছরের সহযোগিতা চুক্তি করে সম্পর্ককে আরও সংহত করেছে দেশটি। আবার ২০২২ সালে সৌদির সঙ্গে সমন্বিত কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি করেছে এশিয়ার বৃহৎ অর্থনীতির এ দেশ।
তবে সৌদি ও ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের এতটা বিস্তার হলেও এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার মধ্য সংযোগ তৈরি করতে ২০১৩ সালে চালু চীনের উচ্চবিলাসী অঞ্চল ও পথের উদ্যোগে (বিআরআই) নেই এই দুই দেশ। এ প্রকল্পের আওতায় বন্দর, রেলপথ ও অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে।
২০০৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে চীন এ অঞ্চলে ২৭ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এই অঞ্চলে চীনের এটিই সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। এর বাইরে ইরাক থেকে তেল ও কাতার থেকে গ্যাস কিনছে দেশটি। আবার আলজেরিয়া, মরক্কো, তুরস্ক, মিসর ও সৌদি আরবে অস্ত্র রপ্তানি করছে। কায়রোর বাইরে নতুন রাজধানী বানাতেও মিসরকে সহায়তা দিচ্ছে তারা। এ ছাড়া মক্কা নগরে মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক নির্মাণ করেছে চীন।
‘আমার মনে হয় না, চীন মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে উৎখাত করতে চায়। কারণ, এখানে যুক্তরাষ্ট্র এমন কিছু কাজ করে, যা করতে চীন মোটেই পছন্দ করে না’
২০২২ সালের ডিসেম্বরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং তিন দিনের সফরে সৌদি আরবে যান। এ সময় তিনি প্রথমবারের মতো আরব লিগ ও উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থার (জিসিসি) সঙ্গে শীর্ষ সম্মেলন করেছেন। সৌদির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান চীনা প্রেসিডেন্টের সফরকে ‘নতুন যুগের সূচনা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
ইতিমধ্যে বেইজিং এ অঞ্চলে হুয়েই কোম্পানির মাধ্যমে পঞ্চম প্রজন্মের মুঠোফোন সেবা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক কুইন্সি ইনস্টিটিউট ফর রেসপনসিবল স্টেটক্র্যাফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ত্রিতা পারসি বলেন, সব মিলিয়ে এ অঞ্চলে চীনের প্রভাব স্বয়ংক্রিভাবে বেড়ে যাবে। এই প্রভাব সৌদি ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে চীনকে সফল করে তুলতে পারে। এই অঞ্চলের সব দেশ–ই অর্থনৈতিক কারণে চীনের সহায়তা চায়।
এমনকি মধ্যপ্রাচ্য আদর্শিকভাবে চীনকে নিরপেক্ষ অংশীদার মনে করে। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর রাজনীতি থেকে মানবাধিকার ইস্যুসহ বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ বিষয়ে চীন কখনো নাক গলায়নি। এখানেই যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে চীন মধ্যপ্রাচ্যের শাসকদের কাছে অনেক বেশি পছন্দের।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নেই চীনের। এ ছাড়া এই অঞ্চলের কোনো দেশের ওপর সামরিক হস্তক্ষেপ বা নিষেধাজ্ঞার মতো কোনো ইতিহাসও দেশটির নেই।
টরন্টো বিমানবন্দর থেকে দেড় কোটি ডলারের স্বর্ণ ও মূল্যবান সামগ্রী চুরি
কানাডার টরন্টো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বড় ধরনের চুরির ঘটনা ঘটেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, দেড় কোটি ডলারের বেশি দামের স্বর্ণ ও মূল্যবান সামগ্রী চুরি হয়েছে। এ ঘটনা ঘটেছে ১৭ এপ্রিল। দেশটির অন্টারিও প্রদেশের খনি থেকে তোলা স্বর্ণ পরিবহনে এই বিমানবন্দর ব্যবহার করা হয়।
বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় উড়োজাহাজে করে পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত একটি কনটেইনার বিমানবন্দরে আসে। বিমানবন্দরে আসার পর কনটেইনারটি কার্গো রাখার একটি স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। কনটেইনারে ছিল স্বর্ণ ও মূল্যবান সামগ্রী। পুলিশের ধারণা, সেখান থেকেই তা চুরি করা হয়েছে।
কানাডার সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের ইতিহাসে এযাবৎকালে যতগুলো বড় ধরনের চুরির ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর মধ্যে এটি একটি। দেশটিতে বড় ধরনের চুরির ঘটনার অন্যতম হলো ২০১১ ও ২০১২ সালে কুইবেকে এক সংরক্ষণাগার থেকে প্রায় ১ কোটি ৮৭ লাখ ডলার দামের ‘গ্রেট কানাডিয়ান ম্যাপল সিরাপ’ চুরি।
অন্টারিও প্রদেশের পিল অঞ্চলের পুলিশ পরিদর্শক স্টিফেন দুইভেস্তেয়েন স্বর্ণ চুরির ঘটনাকে বিরল হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, সম্ভাব্য সব উপায়েই তদন্ত করা হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। সেখানে তিনি বলেন, প্রায় পাঁচ বর্গফুটের কনটেইনারটির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। উড়োজাহাজে বহন করে নিয়ে আসা ওই কনটেইনারে অনেক স্বর্ণ ছিল। স্বর্ণ ছাড়াও কনটেইনারটিতে মূল্যবান অনেক সামগ্রীও রাখা ছিল।
স্টিফেন দুইভেস্তেয়েন আরও বলেন, ‘আমাদের বর্তমান লক্ষ্য হলো, এই চুরির একটা হদিস খুঁজে বের করা। আমরা এর সমাধান করতে চাই। আমি বর্তমানে এ ছাড়া আর বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না। তবে বিমানবন্দরের যাত্রীদের জন্য কোনো হুমকি নেই। এতে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে বলে আমরা মনে করছি না।’
Post a Comment